ও জীবনের সব পাতা পড়ে ফেলে চলে গেল!
রনজু খন্দকার:
আহসান হাবিব আর আমার একসাথে সমরেশসমগ্র পড়ে ফেলার কথা। কিন্তু তার আগেই ও জীবনের সব পাতা পড়ে ফেলে চলে গেল! এত আগে!
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ইয়ারমেট ছিল আহসান। ও পড়ত জেনেটিক্সে, আমি সাংবাদিকতায়। ও বিজ্ঞানের আধুনিকতম শাখায়, আর আমি কলায়। তারপরেও আমাদের দারুণ বন্ধুত্ব হয়েছিল। আমার মতো ও-ও ‘আউট বই’ পড়ত। এই বই লেনদেন করতে গিয়েই আমাদের বন্ধুত্ব আরও গাঢ় হয়।
আমরা দুজনই সমরেশ মজুমদারের ভক্ত ছিলাম। তার গর্ভধারিণী, সাতকাহন, উত্তরাধিকার, কালপুরুষ, কালবেলা–এসব পড়ে মুগ্ধ হয়ে যাই। কথা হয়, সমরেশের যত বই পাব্লিশ হবে আমরা সব পড়ব।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষ হওয়ার পর কে যে কই চলে গেলাম! আমি সাংবাদিকতা করতে ঢাকায়। আহসান যে কই গেল, জানা হলো না। ওর ফোন নম্বর হারিয়েছিলাম। ফেসবুক তখনো এত জনপ্রিয় ছিল না।
ঢাকায় যখন কিছুটা থিতু হলাম, খবর পেলাম আহসান বিসিএস দিয়ে পুলিশে জয়েন করেছে। শুনে এত খুশি হয়েছি! ওর মতো পড়ুয়া, ভদ্র ছেলে পুলিশে! পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সাত জনমের কপাল!
নয়-নয় করে ঢাকার জীবন ৮ বছর পাড়ি দিলাম। এর মধ্যে আহসানের বাড়ি কুমিল্লার গোমতীতে, আমাদের গাইবান্ধার ঘাঘটে কত জল গড়াল! আমি এ বছরের জানুয়ারিতে চলে এলাম বাড়িতে। সাংবাদিকতা ছেড়ে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতায়।
বাড়ি আসার পর ফেসবুকে আমাদের চবির ব্যাচ ৪২-এর গ্রুপে একদিন আহসানের আইডির সন্ধান পেলাম। ও সদ্য পদোন্নতি পেয়ে এএসপি হয়েছে! ভাবলাম, আইডিতে রিকোয়েস্ট দিই। পরেই ভাবলাম, নাহ, এখন নয়। সাংবাদিক থাকতে ওর খোঁজ নিইনি। এখন রিকোয়েস্ট দিলে কী ভাবে!
আরও ভাবলাম, আমি নয়, ও কোনো দিন আমার আইডির সন্ধান পেলে রিকোয়েস্ট দেয় কি না, দেখি। আইডি পেলে নিশ্চয় রিকোয়েস্ট দেবে।
কিন্তু এ কী! আমাকে রিকোয়েস্ট না দিয়েই চলে গেল আহসান! করোনায় সংক্রমিত হয়ে এত তাড়াতাড়ি চলে গেল এত তাজা প্রাণ! কিন্তু আমাদের যে সমরেশ শেষ করে ফেলার কথা, তার কী হবে, বন্ধু!
রনজু খন্দকার
লেখক ও শিক্ষক